কিলিয়ান এমবাপের রিয়াল মাদ্রিদে আগমন ছিল নিঃসন্দেহে গত দশকের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত চুক্তি। এক অন্তহীন নাটকের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর সবুজ গালিচায় পা রেখেছিলেন তিনি – করতালি, আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা আর এক নতুন ‘গ্যালাকটিকো’ যুগের প্রতিশ্রুতির মধ্যে দিয়ে। কিন্তু ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে আজ যখন আমরা বর্তমানে দাঁড়িয়ে, তখন একটি কঠিন সত্য স্পষ্ট: এমবাপে সেই প্রত্যাশার আলোয় নিজেকে রাঙাতে পারেননি। আর সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, যে ম্যাচগুলো দলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে তাঁর প্রভাব প্রায় অদৃশ্যই থেকে গেছে। বিশ্বকাপজয়ী তারকাকে নিয়ে এভাবেই লিখেছে মাদ্রিদভিক্তিক রিয়াল ঘেষা স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক মার্কা।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, হ্যাঁ, ফরাসি এই তারকা গোল করেছেন, সতীর্থদের দিয়ে গোল করিয়েছেন। কিন্তু সেই পরিসংখ্যানের বেশিরভাগটাই এসেছে আলাভেস, কাডিজ, গেতাফের মতো তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে – যেখানে চাপের লেশমাত্র ছিল না, যেখানে সত্যিকারের তারকার আগুন পরীক্ষা করার মঞ্চ প্রস্তুত থাকে না। যখনই দলের প্রয়োজন পড়েছে নেতৃত্বের – এল ক্লাসিকোর মহারণে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের স্নায়ুক্ষয়ী রাতে, কিংবা লা লিগার ভাগ্য নির্ধারণী লড়াইয়ে – এমবাপেকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি যেন হারিয়ে গেছেন, কখনও কখনও ম্লান হয়ে পড়েছেন বেলিংহ্যাম, ভিনিসিয়াস জুনিয়র বা এমনকি রদ্রিগোর মতো সতীর্থদের দ্যুতিতে।
কারণটা কি মানিয়ে নেওয়ার অভাব? নাকি অতিমাত্রায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক খেলা? নাকি প্রত্যাশার অসহনীয় চাপ? অজুহাত যা-ই হোক না কেন, সত্যটা হলো এমবাপে এখনও খেলছেন যেন তিনি প্যারিসেই আছেন, যেখানে কাঁধের ওপর দায়িত্বের বোঝাটা ছিল অনেক হালকা। এখানে, মাদ্রিদে, একটা সুন্দর ড্রিবলিং বা তীব্র গতির দৌড়ই সব নয়। এখানে জ্বলে উঠতে হয় ঠিক সেই মুহূর্তে, যখন সব কিছু ঝুঁকির মুখে, যখন সাদা জার্সিটার ওজন দ্বিগুণ মনে হয়, আর যখন একটা গোল বদলে দিতে পারে পুরো মৌসুমের গল্প।
ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ তাঁকে এনেছিলেন এক বিজয়ী প্রকল্পের নেতৃত্ব দিতে। কিন্তু আজ ভালদেবেবাসের বাতাসে ভাসছে চাপা গুঞ্জন – তবে কি ভুল ‘গ্যালাকটিকো’-কে বেছে নেওয়া হয়েছে? কারণ যখন দলের অন্যরা নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছেন, তখন এমবাপে যেন নিজের সেরা মুহূর্তটি খুঁজেই চলেছেন। আর মাদ্রিদে, সময় অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে দ্রুত দৌড়ায়।
প্রতিভা, দক্ষতা, আকর্ষণ – সবই আছে তাঁর। কিন্তু এখানে, শুধু এটুকুই যথেষ্ট নয়। এখন সময় এসেছে এমবাপের নিজেকে প্রমাণ করার – তিনি ইতিহাস গড়তে এসেছেন, শুধু জার্সি বিক্রি করার তারকা হতে নয়। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেই অধরা স্বপ্নটা পূরণ করতে হলে, তাঁকে জ্বলতে হবে ঠিক তখনই, যখন আলো সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
বিটি/ আরকে