back to top
26 C
Dhaka
মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি 18, 2025

নানা উদ্যোগে স্বকীয়তা ফিরে পাচ্ছে সেন্টমার্টিন

Must read

যত্রতত্র ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার, নানা ভাবে পরিবেশ দূষণ এবং নির্বিচারে প্রবাল-কোরাল-পাথর উত্তোলন কমে এসেছে দেশের প্রবাল সমৃদ্ধ একমাত্র দ্বীপ সেন্টমার্টিনে। শুধু তাইনয়, দ্বীপের দূষণকারী প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহের পর রিসাইকেল (পুনর্ব্যবহার) করা হচ্ছে এখন। পাশাপাশি সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্লাস্টিক বোতলের পানির পরিবর্তে বিকল্প উপায়ে খাবার পানি নিশ্চিত করতে সরকারী উদ্যোগ শীঘ্রই বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

গত শুক্রবার ও রোববার দুই দিন সেন্টমার্টিন দ্বীপ ঘুরে এসে এমন তথ্য জানিয়েছেন পরিবেশবাদীদের একটি দল। ১০ সদস্যের পরিবেশবাদী এ দলের নেতৃত্বে ছিলেন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) চেয়ারম্যান এডভোকেট মুজিবুল হক।

এডভোকেট মুজিবুল হক সরকারি বার্তা সংস্থা বাসসকে বলেন, সেন্টমার্টিনে যে অবৈধ হোটেল-রিসোর্ট নির্মিত হয়েছে বা হচ্ছে, তা প্রশাসনের কারও অজানা নয়। তারপরও আশার বাণী হচ্ছে গত ডিসেম্ভর থেকে পর্যটক সীমিতকরণের পর সেন্টমার্টিন দ্বীপে একদিকে যেমন ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার কমে গেছে, অপরদিকে দ্বীপের সার্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশ অনেকটা সংরক্ষণ হচ্ছে। যা সরকারের পাশাপাশি পরিবেশবাদীদের একটা বড় সাফল্য এবং স্থানীয় বাসিন্দারা পাচ্ছেন দূষণমুক্ত একটা পরিচ্ছন্ন দ্বীপ।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে সরকার সেন্টমার্টিনে পর্যটক সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিু এ চার মাস সেখানে পর্যটক সীমিত থাকবে। নভেম্বরে পর্যটকরা যেতে পারবেন, কিন্তু রাত যাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি পর্যটক সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন না। ফেব্রুয়ারি মাসে সেন্ট মার্টিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজে পর্যটক যাওয়া বন্ধ রাখা হবে। সরকারের এসব সিদ্ধান্ত গত নভেম্বর মাস থেকে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

আট বর্গকিলোমিটারের প্রবালসমৃদ্ধ সেন্টমার্টিন দ্বীপের সুরক্ষায় প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহের পর রিসাইকেলের কাজ করছে শিল্প গ্রুপ প্রাণ-আরএফএল ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। এছাড়া দ্বীপে প্লাস্টিক বোতলের পানির পরিবর্তে বিকল্প উপায়ে খাবার পানি নিশ্চিত করা এবং বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার (প্লাজমা রিয়েক্টর) কাজ করবে সরকার।

এই প্রকল্পের আওতায় থাকবে দ্বীপের সমস্ত বর্জ্য সংগ্রহে পরিবেশবান্ধব পরিবহন (বেকোটেগ)। সেন্টমার্টিনের পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিশেষ এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে বিশ্ব ব্যাংকের অনুদানে।

এমন উদ্যোগ সফল হলে দ্বীপের পরিবেশদূষণ যেমন কমে আসবে, তেমনি প্রবালসহ সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে। বদলে যাবে সেন্টমার্টিন।

কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আবুল মনজুর বলেন, এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রেইন ওয়াটার, গ্রাউন্ড ও সারফেস ওয়াটার পরিশোধন করে সেন্টমার্টিন দ্বীপে বাসিন্দাদের মধ্যে খাবার পানি সরবরাহ করা। এতে করে দ্বীপে প্লাস্টিক বোতলের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হবে। এই পানির মান যাচাইয়ের জন্য থাকবে বিশেষ ল্যাবরেটরি। ইট, সিমেন্ট ও লোহার রড ছাড়া পরিবেশবান্ধব অপারেশন বিল্ডিং ও আন্তর্জাতিক মানের দু’টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও মানব বর্জ্য, মেডিকেল বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য ও প্লাস্টিক বর্জ্য মিলেই থাকবে সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (প্লাজমা রিয়েক্ট)। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে দ্বিতীয় প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদনের দিক থেকে তৃতীয় দেশ হিসেবে তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ব্লু ইকোনমি রক্ষা, সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই অর্থনীতি নিশ্চিতে সহায়তা করতে ইউএনডিপির সঙ্গে প্রাণ-আরএফএল এই উদ্যোগ নিয়েছে। এ কর্মসূচির অধীনে প্রাণ-আরএফএলের স্বেচ্ছাসেবকেরা সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে দ্বীপের নির্ধারিত ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে আসবে। বর্জ্যগুলো যন্ত্রের মাধ্যমে সংকুচিত করে সমুদ্রপথে টেকনাফে নেওয়া হবে। এরপর নিজস্ব পরিবহনের মাধ্যমে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ও ডাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের রিসাইক্লিং প্লান্টে রিসাইকেল করা হয়।

দ্বীপের হোটেল মালিক সমিতি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সেন্টমার্টিনে বহুতল ও এক তলা মিলিয়ে হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ ও রেস্তোরাঁর সংখ্যা আড়াইশ’র বেশি। এর মধ্যে গত দুই বছরে তৈরি হয়েছে ১৩০টি। এসব হোটেলের মধ্যে কোনটির স্থাপনা নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি।

উল্লেখ্য, জীববৈচিত্র‌্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিনকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী, সেন্টমার্টিন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

বিটি/ আরকে

- Advertisement -spot_img

More articles

- Advertisement -spot_img

Latest article