চীনে বাদুড়ের দেহে নতুন করোনা ভাইরাসের সন্ধানে উদ্বেগ বাড়ছে। জানা গেছে, এই নতুন ভাইরাসের নাম এইচকেইউ৫-কোভ-২। প্রাথমিক পরীক্ষায় পরিষ্কার হয়ে গেছে, সম্ভবত এই ভাইরাস মানুষের শরীরকেও সংক্রমিত করার ক্ষমতা রাখে ঠিক করোনা ভাইরাসের মতো। কেননা এদের সেল-সারফেস প্রোটিনের গঠন অবিকল সার্স-কোভ-২-এর মতোই!
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট অনুসারে, এইচকেইউ৫-কোভ-২ নামক নতুন ভাইরাসটি শি ঝেংলির নেতৃত্বে ভাইরোলজিস্টদের একটি দল আবিষ্কার করেছে। ঝেংলি উহান ইনস্টিটিউটে করোনাভাইরাস নিয়ে তার আজীবন কাজের জন্য ‘ব্যাটওম্যান’ নামে পরিচিত। এদিকে শোনা যায় উহান ইনস্টিটিউটের একটি ল্যাব থেকেই ছড়িয়ে পড়েছিলো করোনা ভাইরাস। যদিও সে কথা বারবার অস্বীকার করে এসেছে চীন।
চীনা গবেষকরা দেখেছেন যে, নতুন ভাইরাসটির সঙ্গে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস যা কোভিড মহামারির দিকে পরিচালিত করেছিল, অনেক মিল রয়েছে। কারণ এটিও কোভিডের মতো এসিই২ নামক মানব কোষে অনুপ্রবেশ করতে পারে। এইচকেইউ৫-কোভ-২ হল মেরবেকোভাইরাস সাবজেনাসের একটি করোনাভাইরাস, যার মধ্যে মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম সৃষ্টিকারী ভাইরাসও রয়েছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে নতুন ভাইরাসটি মানব কোষে এসিই২-এর সঙ্গে আবদ্ধ হতে পারে, যা এটিকে সার্স-কোভ-২ এবং এনএল৬৩ (একটি সাধারণ সর্দি-কাশির ভাইরাস)-এর মতো করে তোলে।
২০১৯ সালের শেষ দিকে চীন থেকে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে মরণঘাতী করোনা ভাইরাস। যার কবলে পড়ে বিশ্বে ৭০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। অতিমারির সেই ভয়ংকর দিন যেন আর না ফেরে সেটাই গোটা বিশ্বের প্রার্থনা। এই পরিস্থিতিতে ভয় বাড়াচ্ছে এই নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস।
নিউজউইক অনুসারে, গবেষণার ফলাফল থেকে জানা গেছে, বাদুড়ের মারবেকোভাইরাস, যা ফাইলোজেনেটিকভাবে এমইআরএস-কোভ-এর সঙ্গে সম্পর্কিত, মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার উচ্চঝুঁকি তৈরি করে। হয় সরাসরি সংক্রমণের মাধ্যমে অথবা মধ্যবর্তী কোনো হোস্ট দ্বারা। তবে এই ভাইরাস নিয়ে এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাকি আছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
একইসঙ্গে গবেষণাপত্রে লেখা হয়েছে, গঠনগত ও কার্যকরী বিশ্লেষণগুলো ইঙ্গিত দেয় যে এইচকেইউ৫-কোভ-২ মানুষের এসিই২-এর সঙ্গে ভালো অভিযোজন করে। এইচকেইউ৫-কোভ-২ মানুষের শ্বাসযন্ত্র এবং আন্ত্রিক অঙ্গগুলোকে সংক্রামিত করার ক্ষমতা রাখে। এই আবিষ্কার মানুষের মধ্যে কোনও নতুন রোগ সৃষ্টি করবে কিনা তা এখনও অজানা। এই নতুন ভাইরাসের ফলে আরেকটি মহামারির উদ্বেগ রয়েছে কিনা সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. মাইকেল অস্টারহোম গবেষণার ফলাফল নিয়ে এখনই মাথা ঘামাতে চাইছেন না। তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের তুলনায় একই ধরনের সার্স ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে, যা মহামারির ঝুঁকি কমাতে পারে।’
বিটি/ আরকে