পাকিস্তান ও বাংলাদেশ উভয়ই একাধিক পণ্য বাণিজ্যে আগ্রহী হওয়ায়, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ এক বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে এবং এটি ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে দ্য নিউজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানি ইংরেজি দৈনিক দ্য নিউজ-এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের হাই কমিশনার মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন খান এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি রোববার সন্ধ্যায় কাসুর ও ফয়সালাবাদ থেকে তার প্রথম সফর শেষে এই কথা বলেন। সেখানে তিনি ব্যবসায়ী ও বাণিজ্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে বিস্তর আলোচনা করেন।
বাংলাদেশের হাই কমিশনার তার সফরকে ফলপ্রসূ ও লাভজনক বলে উল্লেখ করেন। তিনি গত মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তিনি শেখ হাসিনার সরকার অপসারণের পর পাকিস্তান প্রথম বাংলাদেশি দূত।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের অনেক পণ্যের বাংলাদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, তেমনি বাংলাদেশের অনেক পণ্যও পাকিস্তানের জন্য একটি লাভজনক বাজার সৃষ্টি করেছে।
তিনি আরও জানান, দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে পনেরো বছরেরও বেশি সময় পর পুনরায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হওয়াটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। পাকিস্তানের তুলা, চিনি, চাল, পোশাক (বিশেষত মহিলাদের পোশাক), এবং ফলমূল (বিশেষত আম) বাংলাদেশের বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অপরদিকে, বাংলাদেশ পাকিস্তানে আনারস, পাট, ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য এবং পোশাক রপ্তানি করতে পারে।
হাই কমিশনার আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা ও বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা সীমাহীন।
এদিকে, প্রায় দুই দশক পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তান বাংলাদেশে ২৬,০০০ মেট্রিক টন চাল রপ্তানি করেছে। মোট ৫০,০০০ মেট্রিক টনের চাল ট্রেডিং কর্পোরেশন অব পাকিস্তান (টিসিপি) এর মাধ্যমে রপ্তানি করা হবে, যার বাকি ২৪,০০০ মেট্রিক টন চাল আগামী মাসে পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন (বিটিসি) পাকিস্তানের কাছ থেকে সরকারি পর্যায়ে (জি-২-জি) চাল কেনার আগ্রহ প্রকাশের পর টিসিপি গত ডিসেম্বরে একটি দরপত্র আহ্বান করেছিল। এতে ৫০,০০০ মেট্রিক টন লম্বা দানার সাদা চাল (আইআরআরআই-৬) এবং ৫০,০০০ মেট্রিক টন নন-বাসমতি পোলাও চাল অন্তর্ভুক্ত ছিল।
৬ জানুয়ারি দরপত্র খোলার পর ১১টি কোম্পানি লম্বা দানার সাদা চালের জন্য দরপত্র দাখিল করে, যার দর প্রতি মেট্রিক টন ৪৯৮.৪০ ডলার থেকে ৫২৩.৫০ ডলার পর্যন্ত ওঠানামা করছিল। তবে, নন-বাসমতি পোলাও চালের জন্য কোনো দরপত্র জমা পড়েনি, ফলে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। উল্লেখ্য, নন-বাসমতি পোলাও চাল বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয়।
নতুন দরপত্র অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি ২৭ তারিখের মধ্যে আগ্রহী কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব জমা দিতে হবে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ৬০% চাল চট্টগ্রাম বন্দরে এবং ৪০% মংলা বন্দরে সরবরাহ করা হবে, যা করাচি বন্দর হয়ে পাঠানো হবে। চালগুলো ৫০ কেজি পলিপ্রোপিলিন বোনা বস্তায় প্যাকেট করে বাল্ক কার্গো আকারে পাঠানো হবে।
এছাড়া, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস আন্তর্জাতিক ইভেন্টের ফাঁকে দুইবার বৈঠক করেছেন, যেখানে তারা দুই দেশের মধ্যে সব ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিটি/ আরকে