বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমান এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা প্রায় ২৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ করে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বৃহস্পতিবার সিআইডি ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম এ তথ্য জানায়।
বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি, প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার হোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক হতে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতসহ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ করা হয়েছে।
অনুসন্ধান সংশ্লিষ্টরা জানান, সালমান এফ রহমান এপোলো অ্যাপারেলস ও কাঁচপুর অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে ২১টি এলসি’র (বিক্রয় চুক্তি) মাধ্যমে দুবাইয়ে ছেলের প্রতিষ্ঠান আরআর গ্লোবালে ২ কোটি ৬০ লাখ ডলারের বেশি পাচার করেছেন। বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বিদেশে টাকা পাচারের এই ঘটনায় অর্থ পাচার আইনে মামলা করছে সিআইডি। বৃহস্পতিবার এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত প্রায় ২৫০ কোটি বাজারমূল্যের এই সম্পদ জব্দের আদেশ দেন।
মামলায় সালমান এফ রহমান ছাড়াও অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন, বেক্সিমকো গ্রুপের শেয়ার হোল্ডার এবং ডিরেক্টর এ এস এফ রহমান, এপোলো এপারেলস লিমিটেডের শেয়ার হোল্ডার এবং ডিরেক্টর সৈয়দ ফরিদুজ্জামান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আরআর গ্লোবাল ট্রেডিংয়ের মালিক আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও আহমেদ শাহরিয়ার রহমান।
সিআইডি জানায়, পাচারে অভিযুক্তদের জব্দ হওয়া সম্পদের মধ্যে রয়েছে ঢাকা জেলার দোহার এলাকায় সর্বমোট ১হাজার ৯৬৭ দশমিক ৯১৯ শতাংশ জমি এবং জমিতে নির্মিত স্থাপনা। রাজধানীর গুলশান এলাকায় ’দ্য এনভয় ৮৪ গুলশান ২’ নামক ভবনে সালমানের ছেলে অভিযুক্ত আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানের নামে ৬হাজার ১৮৯ দশমিক ৫৪ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট। এছাড়াও গুলশান আবাসিক এলাকায় ৩১নম্বর প্লটের উপর নির্মিত ট্রিপ্লেটস নামে ৬ তলা ভবনের ২য় ও ৩য় তলার ২হাজার ৭১৩দশমিক ১৯ বর্গফুটের ডুপ্লেক্স বিলাশবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে।
সিআইডির অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যালোচনার তথ্য অনুযায়ী, বেক্সিমকো গ্রুপ গত ১৫ বছরে ৭টি ব্যাংক থেকে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ গ্রহণপূর্বক বিদেশে পাচার করেছে। এর মধ্যে জনতা ব্যাংক থেকে ২১ হাজার ৬৮১ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ৫২১৮ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ২৯৫ কোটি, সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক থেকে ৫৬৭১ কোটি এবং এবি ব্যাংক থেকে ৬০৫ কোটি টাকাসহ মোট ৩৩,৪৭০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেছে।
এছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপ গত কয়েক বছরে বাজার থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সৌদি আরবে যৌথ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের বেশির ভাগ অর্থ বাংলাদেশ হতে ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং ও হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে।
বিটি/ আরকে