বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী অঞ্চলের ফুলচাষিরা। নিজেদের খেতের ফুলগাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। তাদের আশা, সামনের দিনগুলোতে ফুলের দাম আরও বাড়বে এবং তারা লাভবান হতে পারবেন।
সরজমিনে দেখা যায়, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, নাভারণ ও পানিসারা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রয়েছে নানা জাতের ফুল। এই অঞ্চলের কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছে গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদা, লিলিয়াম, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকাসহ অন্তত ১৩ ধরনের ধরনের ফুল।
গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে গদখালীতে ফুলের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ভোরেই চাষীরা বিভিন্ন যানবাহনে তাদের উৎপাদিত বাহারি সব ফুল নিয়ে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে বিক্রির জন্য দাঁড়িয়েছেন। ফুলের জোগান বেশ ভালোই। গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, চন্দ্র মল্লিকা, গাঁদা ফুলের দাম কিছুটা কম হলেও ঊর্ধ্বমুখী গোলাপের দাম। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে ফুলের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। যে গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৫ টাকা দরে, গত বৃহস্পতিবার সেই গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৮ থেকে ১০ টাকায়।
ফুলচাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলছেন, সামনের এই তিন দিবসে অন্তত ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।
এদিন বাজারে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে—৮ থেকে ১০ টাকা, জারবেরা প্রতি পিস ৮ থেকে ১০ টাকা, রজনীগন্ধা স্টিক প্রতি পিস ৮ থেকে ১০ টাকা, জিপসি আঁটি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাঁদা প্রতি হাজার ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, গ্লাডিওলাস রং ভেদে ৮ থেকে ১২ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা প্রতি পিস ৩ থেকে ৫ টাকা। তবে উৎসব যত ঘনিয়ে আসছে ফুলের দাম ততই বাড়ছে।
ফুলচাষি পলাশ হোসেন জানান, ১০ কাঠা জমিতে গোলাপ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘গত দুদিন আগে গোলাপের দাম ছিল ৫ টাকা। বর্তমানে ৮ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে ফুলের দাম আরও বাড়বে।’
ফুলচাষি সোহান হোসেন বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে জারবেরা চাষ করেছি। এ বছর ফুলের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। এখন ১০ থেকে ১২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আসছে ১৪ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ফুলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। সামনে দিবসগুলোতে দাম আরও বাড়বে এবং লাভবান হতে পারব।
কুষ্টিয়া থেকে ফুল কিনতে আসা ফুল ব্যবসায়ী শাকিল হোসেন বলেন, ‘প্রায় ১৫ হাজার টাকার ফুল কিনেছি। গোলাপ ফুলটা বেশি কিনেছি। অন্যান্য বারের তুলনায় এ বছর বেশি লাভ হবে বলে আশা করা যায়।’
গদখালী ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বলেন, ‘সারা বছর ফুল বিক্রি হলেও মূলত বসন্ত বরণ, ভালবাসা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে বেচাকেনা বেশি হয়। তিন দিবসকে ঘিরে গদখালী বাজারে ফুলের বেচাকেনা জমে উঠেছে। উৎসবের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ফুলের দামও ততই বাড়ছে। বাজার দর ভালো পেয়ে ফুলচাষি, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী সকলেই খুশি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আমরা আশা করছি।’
উল্লেখ্য, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী অঞ্চলে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ করেন চাষীরা। প্রায় ৬ হাজার চাষি এ ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত।