মার্কিন প্রযুক্তি খাতের মাল্টিবিলিয়নিয়াররা — যার মধ্যে রয়েছেন ইলন মাস্ক, মার্ক জাকারবার্গ এবং জেফ বেজোস — সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান স্থান দখল করেন। হোয়াইট হাউসে তাদের ক্ষমতা এবং প্রভাবের এই নজিরবিহীন ও অভূতপূর্ব প্রদর্শনটি নজর কেড়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিগুলোর মালিক এই প্রযুক্তি ব্যবসায়ীরা, নির্বাচনের পর গত দশ সপ্তাহ ধরে ট্রাম্পের অনুগ্রহ পাওয়ার চেষ্টা করছেন। চার বছর আগে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সিলিকন ভ্যালির শত্রুভাবাপন্ন প্রতিক্রিয়া থেকে এটি একটি নাটকীয় পরিবর্তনের ইঙ্গিত নির্দেশ করে।
অ্যাপল সিইও টিম কুক এবং গুগল সিইও সুন্দর পিচাই সহ সার্চ ইঞ্জিনটির প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিনও উপস্থিত ছিলেন। টিকটকের সিইও শৌ চিউ মঞ্চের পিছনের সারিতে বসেছিলেন, যদিও তার প্ল্যাটফর্মের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। টিকটক রোববার ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানায় একটি নির্বাহী আদেশের প্রতিশ্রুতির জন্য, যা অ্যাপটিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে আপাতত রক্ষা করতে পারে । তবে, চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন অবস্থায় মার্কিন আইনের বিরোধিতার কারণে অ্যাপটির ভবিষ্যৎ এখনও ঝুলে রয়েছে।
খারাপ আবহাওয়ার কারণে অনুষ্ঠানটি ঘরের ভিতরে স্থানান্তরিত হওয়ায় আসন সংখ্যা খুবই সীমিত ছিল। মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ তার স্ত্রী প্রিসিলা চ্যানকে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন, আর অ্যামাজনের নির্বাহী জেফ বেজোস তার বাগদত্তা লরেন সানচেজকে সঙ্গে নিয়ে আসেন।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যের চেয়ে মঞ্চে তাদের বেশি দৃশ্যমান অবস্থান বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় ছিল, বিশেষ করে জাকারবার্গের জন্য, যাকে ট্রাম্প কয়েক মাস আগেই জেলে ভরার হুমকি দিয়েছিলেন। সম্প্রতি জাকারবার্গ তার কোম্পানির নীতি ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্য করে শিরোনামে এসেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে তথ্য যাচাই প্রক্রিয়া বাতিল করেছেন এবং ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ঘৃণাসূচক বক্তব্যের বিধিনিষেধ শিথিল করেছেন।
মাস্ক ট্রাম্পের প্রতি সবচেয়ে বেশি সমর্থন দেখিয়েছেন। তিনি প্রেসিডেন্টের প্রচারাভিযানে ২৭৭ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছেন এবং তার এক্স প্ল্যাটফর্মকে (আগরে টুইটার) ট্রাম্পপন্থী কণ্ঠের জন্য একটি প্রবর্ধক হিসেবে রূপান্তরিত করেছেন। জাকারবার্গ ও তার সহকর্মীদের মতো বেজোসও ট্রাম্পের মার-আ-লাগো এস্টেটে বেশ কয়েকবার গেছেন। এর মধ্যে অ্যামাজনের জন্য বিশেষ সুবিধা, সরকারি চুক্তি এবং কম নিয়ন্ত্রক তদারকি পাওয়ার আশা রয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক হিসেবে বেজোস বিতর্ক সৃষ্টি করেন, যখন তিনি পত্রিকাটি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সমর্থনের পরিকল্পনা আটকে দেন। এ নিয়ে নিউজরুমে প্রতিবাদ এবং গ্রাহকদের অসন্তোষ দেখা দেয়।
মাস্ককে সরকারি ব্যয় কমানোর বিষয়ে হোয়াইট হাউসকে পরামর্শ দিতে গঠিত ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিশিয়েন্সির সহ-নেতা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি গত দুই মাসের বেশির ভাগ সময় মার-আ-লাগোতে কাটিয়েছেন। মাস্কের স্পেসএক্স ইতিমধ্যেই একটি বড় সরকারি ঠিকাদার এবং অ্যামাজনের এডব্লিউএস ক্লাউড কম্পিউটিং বিভাগ এবং গুগলও মার্কিন সরকারকে তাদের বৃহত্তম ক্লায়েন্টদের মধ্যে গণ্য করে।
গুগল, মেটা, অ্যাপল এবং অ্যামাজন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে নজিরবিহীন অ্যান্টিট্রাস্ট মামলার মুখোমুখি হয়েছে, যা তাদের ভাঙনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
বিটি/ আরকে